বিশুদ্ধ রূপে সালাত আদায় করতে শেখার জন্য এক অনন্য বই
আল্লাহ্ বলেন, “এবং আমাকে স্মরণ কারার জন্য সালাত কায়েম করো” সূরা ত্বাহা-১৪। আল্লাহ্ আরো বলেন “নিশ্চিতভাবে সফলকাম হয়েছে মু’মিনরা, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়াবনত।” - (সূরা মুমিনুন ১-২)
আল্লাহ্ আরো বলেন- (হে নবী!) তোমার প্রতি অহির মাধ্যমে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে তা তিলওয়াত করো এবং সালাত কায়েম করো নিশ্চিতভাবেই সালাত (মানুষকে) অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। - (সূরা আনকাবুত- ৪৫)
উপরে উদ্ধৃত তিনটি আয়াতের মধ্যে প্রথমটিতে আল্লাহ্ বলেছেন তাঁকে (আল্লাহ্কে) স্মরণ করার জন্য সালাত প্রতিষ্ঠিত (কায়েম) করতে। কিন্তু আমরা সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহকে কতটুকু স্মরণ করি? আমরা সালাতে দাঁড়িয়ে ব্যবসা-বানিজ্য, চাকরী, ক্ষেত-কৃষি, পরিবারের সমস্যা, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাবতে থাকি। তাহলে আল্লাহ্কে স্মরণের জন্য সালাত কায়েমের আল্লাহ্র আহবান কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে? সূরা মু’মিনুনে আল্লাহ্ সফলকাম মুমিনের বৈশিষ্ট্য বলেছেন সালাতে তারা বিনয়াবনত। একজন মানুষ যখন তার চেয়ে অধিক ক্ষমতাবান, সম্মানিত ও মর্যাদা সম্পন্ন কোন ব্যক্তির সামনে যায়, তখন সে স্বাভাবিক ভাবেই বিনয়ে নত হয়ে পড়ে। কিন্তু আমরা মহাপরাক্রমশালী, মহাসম্মানিত, অতীব মর্যাদাবান আল্লাহ্র সামনে সালাতে দাঁড়িয়ে কতটা বিনয়াবনত? আমরা সালাত পড়ি আর আমাদের মন পড়ে থাকে অন্য জায়গায়।
সূরা আনকাবুতে আল্লাহ্ নিশ্চয়তা দিয়েই বলেছেন সালাত মানুষকে অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। কিন্তু বাস্তব চিত্র কি? লক্ষ কোটি মুসলিম প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করছে এবং ঠিক সালাত আদায় করেই অশ্লীলতা অন্যায়ে (কুরআন সুন্নাহ্র আলোকে) লিপ্ত হচ্ছে। তাহলে আমরা দেখছি উপরে বর্ণিত আল্লাহ্র আয়াত সমূহের কোনটিই আজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কেন এমনটি হচ্ছে? আল্লাহ্র কালামতো ১০০% সঠিক। তাহলে আমাদের জীবনে সালাতের কোন প্রভাব পড়ছেনা কেন? এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, সালাতের প্রতিটি বিষয় যেমন- কিয়াম (দাঁড়ানো), কেরাত (তিলাওয়াত), বিভিন্ন তাসবীহ্, দোয়া, রুকু, সিজদাহ্, বৈঠক ইত্যাদিতে মহান আল্লাহ্ আমাদের জন্য এমন শিক্ষার ব্যবস্থা রেখেছেন যা আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করে দিবে, কিন্তু আমরা অধিকাংশ মুসলিম তা জানি না।
আমরা জানিনা সালাতে দাঁড়িয়ে আমরা কি পড়ি, কুরাআন তিলাওয়াতে কি বলা হচ্ছে, রুকু সিজদায় কি পড়া হচ্ছে, সালাতের বৈঠকে বসে কি পড়া হচ্ছে, এমনকি আল্লাহ্র কাছে মোনাজাতে কি বলছি তাও আমরা জানি না। যার ফলে এ সালাতে আমরা আল্লাহ্কে স্মরণ করতে পারছি না, সালাতের মধ্যে কোন বিনয় সৃষ্টি হচ্ছে না এবং আমাদের জীবন থেকে অন্যায় অশ্লীলতা দূর করতে পারছি না, এক কথায় সালাত আমাদের জীবনে কোন প্রভাব ফেলতে পারছে না। যে সালাত আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলতে অক্ষম তা যে আল্লাহ্র দরবারে কবুল হচ্ছে না তা বোঝাই যায়। সুতরাং সালাতের প্রতিটি বিষয় সহীহ্ ভাবে জেনে বুঝে পড়লে সালাত পরিপূর্ণ হবে, পরিশুদ্ধ হবে, আমাদের জীবনে সালাতের প্রভাব পড়বে এবং তা আল্লাহ্র দরবারে কবুল হবে। এই সালাত-ই কেবল আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে।
এই বইটি সংকলনের আর একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে কুরআনকে আরবী ভাষায় বুঝতে সহযোগিতা করা। আমরা সালাতে যা পড়ি, সূরা ফাতিহা, আরো কিছু সূরা, দোয়া, তাসবীহ্, তাতে কুরআনে ব্যবহৃত প্রায় অর্ধেক শব্দ এসেছে । সুতরাং এই বইটির প্রতিটি বিষয় কেউ যদি আয়ত্ত করে, তাহলে সে দেখতে পাবে, কুরআনের প্রায় অর্ধেক শব্দ তার জানা।
উপরে বর্ণিত লক্ষ্য দুটিকে সামনে রেখেই আমাদের প্রচেষ্টার ফসল “সালাত পড়ি বুঝে বুঝে” বইটি। এতে আমরা আযান থেকে শুরু করে সালাতে পঠিত সকল বিষয়, ছানা থেকে দোয়ায়ে কুনুত পর্যন্ত এবং সালাম ফেরানোর পরের দোয়াসমূহ, দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দোয়া এবং আল্লাহ্র কাছে যে সকল মোনাজাত সাধারণত আমরা করি তা অর্থ এবং শব্দার্থ সহ দিয়েছি। এ কাজে কয়েকজন ভাই আমাকে সার্বিক সহযোগীতা করেছেন। আল্লাহ্ যদি আমাদের এই প্রচেষ্টাকে কবুল করেন এবং সকল বাংলাভাষী মুসলিম ভাই-বোন যদি এ থেকে উপকৃত হন, তাহলে আমাদের এ প্রচেষ্টা সফল হবে। আল্লাহ্ আমাদের নেক নিয়তে করা এ প্রচেষ্টাটুকু কবুল করুন। আমীন!